স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের যত সচেতনতা, তার চেয়ে বেশি হলো আতংক। ব্যাপারটা আমরা পুরোটা ছেড়ে দিয়েছি চিকিৎসকদের হাতে। আর চিকিৎসকরাও স্বাস্থ্য ব্যাপারটাকে সাধারণ মানুষের বোধগম্যতার বাইরে যত নিয়ে যেতে পারেন ততই যেন তাদের গর্ব। অথচ আমাদের প্রতিদিনের জীবনে স্বাস্থ্য অতি প্রয়োজনীয় এবং অত্যাবশ্যক একটি বিষয়। স্বাস্থ্য কেবল অসুখ হলে চিকিৎসার বিষয় নয়, স্বাস্থ্য রোগ প্রতিরোধ এবং সচেতনতার বিষয়। স্বাস্থ্য ব্যাপারটা সহজ করে সাধারণ মানুষকে জানানোর ব্যাপারটা আমাদের দেশে একেবারেই নেই। স্বাস্থ্য নিয়ে আমাদের দেশে যে গুরুগম্ভীর আলোচনা এবং লেখালেখি হয় তার বেশিরভাগই সাধারণ মানুষকে আকর্ষণ করতে পারে না। কিন্তু আমরা সবাই স্বাস্থ্য নিয়ে গল্পের মতো ঝরঝরে লেখা প্রত্যাশা করি। যে লেখাগুলোর একদিকে যেমন সাহিত্যমূল্য থাকবে, অন্যদিকে লেখাগুলো পড়ে আমাদের স্বাস্থ্য সচেতনতার ক্ষেত্রে ইতিবাচক পরিবর্তনও ঘটবে। এমন স্বপ্নের একটি বইয়ের প্রত্যাশা পূরণ করবে ডা. পিনাকী ভট্টাচার্যের ‘বালাই ষাট’। লেখাগুলো কলাম আকারে পত্র-পত্রিকায় আগেই প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু অনেক পাঠকই হয়তো এরকম উপভোগ্য, আকর্ষণীয় লেখাগুলো পাঠ থেকে তখন বঞ্চিত হয়েছে। কিন্তু গ্রন্থিত আকারে একসঙ্গে লেখাগুলো পড়লে এক অন্যরকম আনন্দ পাওয়া যায়। এখানে কয়েকটি নিবন্ধ গ্রন্থিত করা হয়েছে। নিবন্ধগুলো গল্পের ছলে খুব সহজ করে বলা হয়েছে। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলা যায়। লেখাগুলোর সবচেয়ে মজার দিক হলো এখানে স্বাস্থ্যের কথা বা চিকিৎসার কথা চাপিয়ে দেয়া হয়নি, গল্পের অনুষঙ্গ হিসেবে এসেছে স্বতঃস্ফূর্ত এবং স্বাভাবিকভাবে। এখানে জটিল ও কঠিন চিকিৎসাবিজ্ঞানের শব্দ প্রয়োগ করে অযাচিত গাম্ভীর্য আনার চেষ্টা করা হয়নি। লেখার সহজাত ভঙ্গীর কারণে, লেখাগুলো ঝরঝরে, ফাঁক-ফোকড় দিয়ে স্বাস্থ্যের তথ্যগুলোকে সাজানো হয়েছে। এই নির্মাণশৈলীই এই নিবন্ধগুলোর সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। সাহিত্য, চিকিৎসাতত্ত্ব এবং মানবতার এক অনবদ্য মেলবন্ধন হচ্ছে এই নিবন্ধগুলোর সবচেয়ে বড় দিক। নিবন্ধগুলোর প্রধান বৈশিষ্ট এগুলো সাহিত্য, কিন্তু সাহিত্যের মধ্যে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়েছেন লেখক আর আছে চিকিৎসার মানবিক দিকটা। একজন পাঠক গ্রন্থটি হাতে নিয়ে এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলবে বলা যায় সহজেই। বাংলাদেশে স্বাস্থ্য নিয়ে প্রকাশিত বইয়ের মরুদ্যানে ‘বালাই ষাট’ একটি সজীব বৃক্ষ। এটা একটি নতুন ধারার সূচনা করবে বলে আশা করছি। সৈয়দ বোরহান কবীর পরিচালক, পরিপ্রেক্ষিত