“একটি প্রবীণ বটের কাছে প্রার্থনা" বইটির ফ্ল্যাপ এর লেখাঃ
এই কাব্য-তরুটির অঙ্কুরণ মঞ্জুরণে একাধিক নেপথ্য যােগাযােগ বর্তমান। প্রকাশ না করলে স্বস্তি পাব না বলেই কথা ক’টি বিবৃত করছি। আমাদের দেশের অনন্য প্রতিভাশালী চিত্রশিল্পী এস. এম. সুলতানের নিসর্গ ও মানুষ’ চিত্রাবলির প্রদর্শনী দেখে আমি বিস্ময়ে অভিভূত হই। সেই সময়ে আমার মনে হয়েছিল এই চিত্রসমূহের চাইতে সুন্দর এবং প্রাণসমৃদ্ধ কোন বস্তু কোথাও দেখিনি। আর শিল্পীকে মনে হয়েছিল ইউরােপের রেনেসাঁ চিত্রকরদের মত এক দেদীপ্যমান পুরুষ। বলা বাহুল্য, এই দুই বােধ। অদ্যাবধি আমার মনে সক্রিয়। এই প্রাণসুন্দর শিল্পী প্রকৃতি এবং প্রকৃতির অন্তর্ভুক্ত সবকিছু তুলির টানে এমন প্রাণবান করে সৃজন করেছেন যে, তার। রেশ আমার মনের ভেতর একটা গভীর ও দীর্ঘকালস্থায়ী দোলার সঞ্চার করে। একটা আবেগ আমার মধ্যে জন্মলাভ করে নিরুদ্ধ আক্রোশে গর্জাতে থাকে অনেকদিন। চিত্তের এই শান্তিনাশা বস্তুটিকে নিয়ে কি করব দীর্ঘদিন মনস্থির করতে পারিনি। মাসখানেক যেতে না যেতেই অনুভব করলাম স্বগ্রামের শৈশবের বুড়াে বটগাছটি উন্মথিত আবেগরাশি একটু একটু পান করে বুকের ভেতর শেকড় ছড়াচ্ছে, ডালপালা বিস্তার করছে। এই প্রবীণ তরুর সম্ভ্রম বিনষ্ট করব এই আশঙ্কায় তখনাে তার ছন্দিত প্রকাশ ঘটাতে সাহসী হইনি। সেই সময়ে আমি জার্মান কবি গ্যোতের অমর কাব্যনাটক ‘ফাউস্টের বাংলা অনুবাদে রত ছিলাম। এই অনুবাদ করার কালেই আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ ঘটে সে বস্তুর, যার প্রাসাদে পঙ্গুও গিরি লংঘন করতে সাহসী হয়, গুণবানজন যার নাম রেখেছেন প্রেরণা।
শরৎ হেমন্ত এই দু’ঋতুতে অনেকখানি লেখার পর শীতে কলম আপনাআপনি থেমে গিয়েছে। শত চেষ্টা করেও একটি পংক্তি রচনা করতে পারিনি। মানবমনের ওপর প্রকৃতির প্রভাব তাে সর্বদীসম্মত। মাঘ মাসের একরাতের শেষের দিকে কোকিলের কৃজন শুনে বাকি অংশ শেষ করতে পারব এমন একটা বিশ্বাস মনের মধ্যে ঘনিয়ে ওঠে এবং পাঁচ সাতদিনের মধ্যেই লেখাটি শেষ করে ফেলি। প্রকৃতির ওপর বিশ্বাস রাখলে কাউকে যে ঠকতে হয় না, এই প্রতীতি মনে আরাে গাঢ়মূল হয়েছে। বাংলা একাডেমীর সংকলন বিভাগের সহকারী অফিসার নুরুল ইসলাম একুশে ফেব্রুয়ারি সংকলনে প্রকাশ করার জন্য অর্ধেক লেখা প্রেসে পাঠিয়ে রচনাটি শেষ করার জন্য ঘনীভূত চাপ তৈরি করেছেন, তার জন্য এই হৃদয়বান তরুণটিকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি।