‘গাভী বিত্তান্ত’ বইয়ের কিছু অংশঃ
আবু জুনায়েদের উপাচার্য পদে নিয়োগপ্রাপ্তির ঘটনাটি প্রমাণ করে দিল আমাদের এই যুগেও আশ্চর্য ঘটনা ঘটে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ফ্যাকাল্টির সদস্যবৃন্দ আবু জুনায়েদের উপাচার্যের সিংহাসনে আরোহণের ব্যাপারটিকে নতুন বছরের সবচাইতে বড় মজার কাণ্ড বলে ব্যাখ্যা করলেন। আবু জুনায়েদ স্বয়ং বিস্মিত হয়েছেন সবচাইতে বেশি। আবু জুনায়েদের বেগম নুরুন্নাহার বানু খবরটি শোনার পর থেকে আণ্ডাপাড়া মুরগির মত চিৎকার করতে থাকলেন। তিনি সকলের কাছে বলে বেড়াতে লাগলেন যে তার ভাগ্যেই আবু জুনায়েদ এমন এক লাফে অত উঁচু জায়গায় উঠতে পারলেন। কিছু মানুষ অভিনন্দন জানাতে আবু জুনায়েদের বাড়িতে এসেছিলেন। নুরুন্নাহার বানু তাদের প্রায় প্রতিজনের কাছে তার সঙ্গে বিয়ে হওয়ার পর থেকে কী করে একের পর এক আবু জুনায়েদের ভাগ্যের দুয়ার খুলে যাচ্ছে সে কথা পাঁচ কাহন করে বলেছেন। অমন ভাগ্যবতী বেগমের স্বামী না হলে, একদম বিনা দেন-দরবারে দেশের সবচাইতে প্রাচীন, সবচাইতে সম্ভ্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের পদটি কী করে আবু জুনায়েদের ভাগ্যে ঝরে পড়তে পারে! যারা গিয়েছিলেন তাদের মধ্যে অনেকেই মুখে কিছু না বললেও মনে মনে মেনে নিতে দ্বিধা করেননি যে একমাত্র স্ত্রী-ভাগ্যেই এরকম অঘটন ঘটতে পারে।
শিক্ষক হিসেবে আবু জুনায়েদ ছিলেন গোবেচারা ধরনের মানুষ। গোটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ডিপার্টমেন্টে বা ডিপার্টমেন্টের বাইরে তার সঙ্গে কারো বিশেষ বন্ধুত্ব ছিল না। আর আবু জুনায়েদ স্বভাবের দিক দিয়ে এত নিরীহ ছিলেন যে তার সঙ্গে শত্রুতা করলে অনেকে মনে করতেন, শত্রুতা করার ক্ষমতাটির বাজে খরচ করা হবে। তাই গোটা বিশ্ববিদ্যালয় পাড়ায় তার বন্ধ বা শত্রু কেউ ছিলেন না।
আমাদের দেশের সবচাইতে প্রাচীন এবং সবচাইতে সম্ভ্রান্ত বিশ্ববিদ্যালয়টি হাল আমলে এমন এক রণচণ্ডী চেহারা নিয়েছে, এখানে ধন প্রাণ নিয়ে বেঁচে থাকা মোটেই নিরাপদ নয়। এখানে যখন তখন মিছিলের গর্জন কানে ঝিম ধরিয়ে দেয়। দুই দলের বন্দুক যুদ্ধে যদি পুলিশ এসে পড়ে সেটা তখন তিন দলের বন্দুক যুদ্ধে পরিণত হয়। কোমলমতি বালকেরা যেভাবে চীনা কুড়াল দিয়ে অবলীলায় তাদের বন্ধুদের শরীর থেকে হাত-পা বিচ্ছিন্ন করে ফেলতে পারে, সেই দক্ষতা ঠাটারি বাজারের পেশাদার কসাইদেরও আয়ত্ত করতে অনেক সময় লাগবে। এখানে যত্রতত্র সে সকল বিস্ময় বালকের সাক্ষাৎ মিলবে যারা কিমিয়া শাস্ত্রের গোপন রহস্য জানার.......